কুরবানীর পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নিষেধ? ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সতর্কতা

🕌 ইসলামী জীবন- মুফতি মুহাম্মদ হাসান | কুরবানী বিশেষ ব্লগ | জুন ২০২৫

কুরবানী শুধুই একটি ধর্মীয় রীতি নয়; এটি আল্লাহর জন্য ত্যাগ ও আনুগত্য প্রকাশের এক মহান সুযোগ। প্রতিবছর ঈদুল আযহায় মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানী করে থাকেন। তবে কুরবানী করার পাশাপাশি আমাদের জানা উচিত, কোন কোন অংশ খাওয়া হালাল এবং কোন অংশ খাওয়া হারাম বা নিষেধ।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করব—কুরবানীর পশুর এমন কিছু অঙ্গ সম্পর্কে যেগুলো খাওয়া ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ, এবং কেন তা থেকে বিরত থাকা জরুরি।


🔴 কুরবানীর পশুর যেসব অংশ খাওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ:

১. রক্ত

📖 কুরআনে বলা হয়েছে:

"তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে রক্ত..." সূরা আল-বাকারা: ১৭৩

🩸 অর্থাৎ রক্ত—বিশেষ করে জবাইয়ের সময় বের হয়ে আসা তরল রক্ত—খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম। কেউ কেউ ভুলবশতঃ কলিজি বা মাংসের গা থেকে রক্ত না ধুয়ে খেয়ে ফেলে, এটাও এড়িয়ে চলা উচিত।


২. পিত্ত (তিতকুটে থলি, যাকে বলে ‘তিতা থলি’)

🧪 এটি পশুর যকৃতের পাশে থাকে এবং এটি খেলে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। ইসলামেও এটি খাওয়া নিষিদ্ধ বা অন্তত অনুচিত হিসেবে বিবেচিত।


৩. মূত্রথলি ও মূত্রনালী

🚫 এগুলো পশুর মল-মূত্র পরিস্রুতির অঙ্গ, যা অশুচি ও নাপাক হিসেবে গণ্য। খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।


৪. মলদ্বার ও তার সংশ্লিষ্ট অংশ

💩 যেহেতু এটি অপবিত্র বস্তু বহন করে, তাই তা খাওয়া নাজায়েয এবং গুনাহের কাজ।


৫. গোপন অঙ্গ ও অণ্ডকোষ

🧴 এগুলোও শরীয়তের দৃষ্টিতে খাওয়া হারাম এবং অশোভন। হাদীস ও ফিকহ গ্রন্থে এগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে।


৬. নখ, চুল, শিং (যদি আলাদা হয়)

🐮 এগুলো খাওয়া তো দূরের কথা, এগুলো বর্জ্য হিসেবে পরিগণিত। এগুলো ব্যবহারেও সাবধানতা জরুরি।


✅ হালাল অংশগুলো কী কী?

  • মাংস, হাড়, চর্বি, কলিজি, ভুঁড়ি (ভালোভাবে পরিষ্কার করে)

  • হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, মগজ ইত্যাদি হালাল ও খাওয়া বৈধ

তবে যেকোন অঙ্গ রান্নার আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি।


🛑 কিছু বাস্তব সতর্কতা:

👉 অনেকে অজ্ঞতাবশতঃ জবাইকৃত পশুর পিত্ত বা তিতা থলি ফুটিয়ে দেয়—ফলে মাংসের স্বাদ নষ্ট হয় এবং গুনাহের শামিল হয়। সতর্ক থাকুন।

👉 কিছু এলাকায় দেখা যায়, গোপন অঙ্গ বা নিষিদ্ধ অংশ রান্না করে খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে—তারা হয়ত জানেন না এটি হারাম। দয়া করে সচেতন করুন।

👉 শিশুদের ও তরুণদের এই বিষয়ে শিক্ষা দিন, যেন তারা ভবিষ্যতে ভুল না করে।


🔚 উপসংহার

আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য যা হালাল করেছেন তা যথেষ্ট। তাই অজান্তে গুনাহে লিপ্ত হওয়া নয়, বরং জেনে-বুঝে শরিয়তের সীমা রক্ষা করাই একজন মু’মিনের দায়িত্ব।

এই কুরবানীতে আসুন আমরা শুধু পশু নয়, নিজের নফসকেও ত্যাগ করি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

🕋 আল্লাহ আমাদের কুরবানী কবুল করুন, আমীন।


✍ লেখক: মুফতি মুহাম্মদ হাসান।

শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসাতুল আশরাফ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-

মিফতাহুল কুরআন ..মাদরাসা,গোবিন্দপুর, ‍যাত্রাবাড়ী,ঢাকা।


📅 প্রকাশকাল: ঈদুল আযহার পূর্ববর্তী সপ্তাহ, ২০২৫

 কুরবানী, হারাম খাবার, ইসলামী বিধান, ঈদুল আযহা

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

২০২৫ সালে ঈদুল আজহার তারিখ | ১৪৪৬ হিজরির চাঁদ দেখা গেছে | ইসলামী জীবন ব্লগ

কুরবানির পশু নির্বাচনের সঠিক গাইডলাইন

সান্ডা ইসলামে হালাল না হারাম? হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ